যাদের নিজের এক খন্ড জমি আছে সবাই চায় সেখানে নিজের মতো করে সুন্দর একটি বাড়ি বানাতে। জমির দাম এখন অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের বাঙালী টিপিক্যাল ন্যাচারের জন্য আমরা বাড়ি বানানোর সময় প্রফেশনালদের সাহায্য নেই না। প্রতিটি বাড়িওয়ালাই ভাবে স্থপতি/ইন্জিনিয়ার কিছুই জানে না আমিই বেশি জানি! তাই রাজমিস্ত্রীকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। এই বেশি জানার ফলে পরবর্তীতে দেখা যায় বাড়ি তৈরীর পর নানা রকম ইউটিলিটি সমস্যা, মোডিফিকেশন চলে, ভাঙাভাঙি, জোড়াতালি চলে; নির্মান ব্যয় বেড়ে যায় বহুগুন অথবা বাড়িটি বসবাসের জন্য পরিপুর্নভাবে উপযোগী থাকেনা। ফলে বাড়িটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কিম্ভুতকিমাকার রুপ ধারন করে। আসুন দেখি একটি বাড়ি তৈরির জন্য কার্যক্রমের ধাপ কি কি:
- ১। প্রথমেই ফাইনান্স এর কথা ভাবুন। অর্থাৎ টাকা কোথা হতে আসবে তা নিশ্চিত করুন এবং বাড়ি বানানোর বাজেট ফিক্স করুন। এর জন্য দরকারি প্রিলিমিনারী এস্টিমেশন এর জন্য অভিজ্ঞ কন্সাল্টেন্ট (স্থপতি/সিভিল-ইন্জিনিয়ার) এর কাছে যান।
- ২। প্লানিং করুন, পুরো বাড়ি একবারে করবেন নাকি দুই তলা করে পরে বাকি চার তলা করবেন। গ্যারেজ কার পার্কিং কয়টি রাখবেন। বাড়িটির অকুপেন্সি কেমন হবে আবাসিক হবে নাকি স্কুল হবে, লিফ্ট, জেনারেটর, সাব স্টেশনের প্রভিশন রাখবেন কি রাখবেন না, আশেপাশে ভবিষ্যতে কি রকমের ইমারত নির্মিত হতে পারে, ছাদে বাগান হবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
- ৩। ভালো স্থপতি দিয়ে বাড়ির প্লান করিয়ে নিন। মনে রাখবেন জমি যত ছোট হোক আর তেড়া বেকা হোক। একজন ভালো স্থপতি সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন। জমির প্রতি স্কয়ার-ফিটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন। এ ছাড়াও স্থপতিকে দিয়ে বাড়ির ফার্ণিচার প্লান ও ইনটেরিওর ডেকোরেশন প্লান করিয়ে নিতে পারেন।
- ৪। অনুমোদন বিষয়ক কিছু কাজ আছে যা বিস্তারিত আরেকদিন আলাপ করব। আজকে সংক্ষেপে বলি। আপনি বাড়ি যেখানেই বানান না কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর কাছ থেকে আপনাকে অনুমোদন নিতে হবে (যেমনঃ ঢাকা মাস্টার প্ল্যান এরিয়ার মধ্যে হলে রাজউক, চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এরিয়াতে হলে সিডিএ থেকে অনুমোদন নিতে হবে)। বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একজন অভিজ্ঞ কন্সাল্টেন্ট আপনাকে জানতে পারবে। প্ল্যানের অনুমোদন নেয়ার আগে আপনাকে LUC (ল্যান্ড ইউজ ক্লিয়ারেন্স) নিতে হবে।
- ৫। প্লান পাসের আগেই সয়েল টেষ্ট করাবেন। কারন পাসের জন্য প্ল্যান জমা দেয়ার সময় এটা লাগবে। হুট করে ফাউন্ডেশন নিয়ে নিজের মনগড়া কোন সিদ্ধান্তে যাবেন না। সয়েলটেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে অভিজ্ঞ সয়েল/ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারের সাথে আলাপ করুন, অথবা আপনার নিযুক্ত কন্সাল্ট্যান্টকেই বলুন, উনি আপনার হয়ে সয়েল/ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারের সাথে পরামর্শ করবেন।
- ৬। বিল্ডিং-এর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ারকে দিয়ে করাবেন। ভূমিকম্প নিয়ে ইদানিং সবাই বেশি চিন্তিত। একজন অভিজ্ঞ সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ার সকল প্রকার ঝুকি মাথায় রেখেই স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করে থাকেন।
- ৭। প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন অভিজ্ঞ ইন্জ্ঞিনিয়ার দ্বারা করে নিন। মনে রাখবেন বাড়ি তৈরির পর প্রাথমিক সমস্যা গুলো প্লাম্বিং এবং ইলেক্ট্রিক ওয়ারিং-এই দেখা যায়। ফলে দেখা যায় ভাঙচুর করতে হচ্ছে বা প্রতিদিন একটি বিরক্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এইটা বাড়ি তৈরীর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ৮। ডিটেইল বিল অফ কোয়ান্টিটি বা ‘বি ও কিউ’ (BOQ) তৈরি করুন এবং আপনার পূর্বের আনুমানিক ব্যায়ের সাথে তুলনা করুন। যদি ব্যয় বেড়ে যায় তবে ডিজাইন বা প্লানে কিছু পরিবর্তন এনে ব্যয় কমাতে পারেন।
- ৯। কনস্ট্রাকশন-এ শুধু মাত্র কন্ট্রাকটরের উপর নির্ভরশীল না হয়ে একজন সাইট ইন্জ্ঞিনিয়ারকে ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম সুপারভিশনে রাখুন, এই ব্যাপারে আপনার কন্সাল্ট্যান্টের সাহায্য নিন।
- ১০। ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করুন এবং আপনার কন্ট্রাক্টর ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা আপনার কনসালটেন্ট দিয়ে মাঝে মাঝে তদারকী করান।
আশা করা যায় এই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে গেলে আপনার স্বপ্নের স্থাপনাটি সার্থকভাবে বাস্তবায়িত হবে ।